কীভাবে চার্লি কার্ক এতটা প্রভাবশালী হয়ে উঠলেন, আর কেনই বা তাকে হত্যা করা হলো?
যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনৈতিক কর্মী এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী চার্লি কার্ককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ইউটাহ অঙ্গরাজ্য থেকে ২২ বছর বয়সী এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। টাইলার রবিনসন নামের ওই যুবককে ধরতে ৩৩ ঘণ্টা তল্লাশি অভিযান চালানোর পর অবশেষে বৃহস্পতিবার রাতে আটক করা হয়। জানা গেছে, তার বাবা-ই তাকে আত্মসমর্পণে রাজি করান।
বুধবার ইউটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কার্ক। এরপর থেকেই দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেন এবং বলেন, দোষী সাব্যস্ত হলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। কার্কের মৃত্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে অনেক প্রভাবশালী নেতা শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
কার্কের উত্থান
১৯৯৩ সালে শিকাগোর শহরতলীতে জন্ম নেওয়া চার্লি কার্ক কৈশোর থেকেই রক্ষণশীল রাজনীতিতে সক্রিয় হন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি ব্রেইটবার্ট নিউজে একটি প্রবন্ধ লেখেন, যেখানে স্কুলগুলোকে ‘অপপ্রচার ছড়ানোর’ অভিযোগে sktarget করেন। এরপর টি পার্টির কর্মী বিল মন্টগোমেরির নজরে আসেন এবং তার সহায়তায় ২০১২ সালে টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ (TPUSA) প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে কার্ক তরুণদের মধ্যে রক্ষণশীল রাজনীতি ছড়িয়ে দেন।
২০১৬ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পান তিনি। যদিও শুরুতে তিনি ট্রাম্পকে খুব বড় ভক্ত হিসেবে দেখাননি, পরে দ্রুতই ট্রাম্পের দৃঢ় সমর্থকে পরিণত হন। ধীরে ধীরে তরুণ রিপাবলিকানদের কাছে কার্ক হয়ে ওঠেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছানোর অন্যতম সেতুবন্ধন।
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী
ট্রাম্পের রাজনৈতিক উত্থানে কার্ক ও তার সংগঠনের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্প নিজেও ২০২৪ সালের নির্বাচনী জয়ে তাদের অবদানের কথা উল্লেখ করেছিলেন। এমনকি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের সময়ও তিনি প্রশাসনিক নিয়োগ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। ট্রাম্পের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও তাকে রাজনীতিতে আরও প্রভাবশালী করে তোলে।
হত্যাকাণ্ডের পেছনের ঘটনা
তদন্তে জানা গেছে, সন্দেহভাজন টাইলার রবিনসন হত্যার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন। নজরদারি ফুটেজে তাকে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি দেখা গেছে। তার রুমমেট ও অনলাইন বার্তালাপ থেকে পুলিশ ধারণা করছে, কার্কের প্রতি গভীর বিরাগ থেকেই তিনি পরিকল্পিতভাবে হামলা চালান। পরে পুলিশ একটি বনাঞ্চল থেকে কাপড়ে মোড়ানো অস্ত্রও উদ্ধার করেছে।
রাজনৈতিক বিভাজনের প্রতিচ্ছবি
কার্কের হত্যাকাণ্ড শুধু যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনকেই নাড়া দেয়নি, বরং দেশটির তীব্র রাজনৈতিক বিভাজনকেও আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, চার্লি কার্ককে মৃত্যুর পর সম্মান জানিয়ে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম’ দেওয়া হবে।