ডেটিং-অ্যাপ দুনিয়ায় এক বিপ্লবী নাম: হুইটনি ওলফ হার্ড
টিন্ডারের সহপ্রতিষ্ঠাতা হুইটনি ওলফ হার্ড একসময় খবরের শিরোনামে আসেন মামলা, অপবাদ আর পুরুষতান্ত্রিক করপোরেট দুনিয়ার লড়াইয়ের জন্য। কিন্তু সেই ভাঙনের ভেতর থেকেই তিনি গড়ে তুলেছেন নিজের সাম্রাজ্য—বাম্বল। আর এই সাহসী সিদ্ধান্তই তাঁকে বানিয়েছে বিশ্বের কনিষ্ঠতম স্বোপার্জিত নারী কোটিপতি। তাঁর বৈচিত্র্যময় জীবনের গল্প নিয়েই নির্মিত হয়েছে ওয়েব সিনেমা ‘সোয়াইপড’, যা টরন্টো উৎসবে প্রিমিয়ারের পর ১৯ সেপ্টেম্বর হুলুতে মুক্তি পেয়েছে। ছবিতে হুইটনির চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিলি জেমস।
টিন্ডারের সূচনা
২০১২ সালে টিন্ডার প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন হুইটনি। নামকরণ, বিপণন কৌশল থেকে শুরু করে তরুণদের কাছে অ্যাপটি পৌঁছে দেওয়ার জন্য ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছুটে বেড়িয়েছেন তিনি নিজেই। তাঁর উদ্যোগেই দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় টিন্ডার।
ব্যক্তিগত সম্পর্কে ভাঙন ও অপমান
সহপ্রতিষ্ঠাতা জাস্টিন মেটিনের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই কর্মজীবনে সমস্যার শুরু। আসতে থাকে হেনস্তামূলক বার্তা, একের পর এক অপমান। ধীরে ধীরে তাঁকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বাইরে রাখা হয়, এমনকি টাইম ম্যাগাজিনে টিন্ডারের সাফল্যের প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেও তাঁর নাম বাদ পড়ে। তখনই তিনি বুঝে যান—এখানে তাঁর জায়গা আর নেই।
মামলা ও একাকিত্ব
২০১৪ সালে সাহস করে টিন্ডারের বিরুদ্ধে মামলা করেন হুইটনি। প্রায় ১৮ মাসের হেনস্তার অভিযোগ আনেন তিনি। মামলা আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি হলেও চুক্তির কারণে (NDA) গণমাধ্যমে কিছু বলার সুযোগ হারান। উল্টো মিডিয়ার চোখে তিনি হয়ে ওঠেন ‘লোভী’ বা ‘সুযোগসন্ধানী নারী’।
বাম্বলের জন্ম
অন্ধকারের মাঝেই নতুন আলো আসে রাশিয়ান উদ্যোক্তা আন্দ্রে আন্দ্রেভের হাত ধরে। তাঁর প্রস্তাবেই ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে টেক্সাসের অস্টিনে নতুন অ্যাপ নিয়ে যাত্রা শুরু করেন হুইটনি। নাম দেন বাম্বল। এখানে প্রথম পদক্ষেপ নেবে নারী, পুরুষকে অপেক্ষা করতে হবে—এই নতুন ধারণাই দ্রুত জনপ্রিয় হয়। প্রথম বছরেই ব্যবহারকারী এক মিলিয়ন, ২০১৯ সালে তা ৩৫ মিলিয়ন ছাড়ায়। বর্তমানে মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী প্রায় ৪ কোটি।
শুধু ব্যবসা নয়, সামাজিক প্রভাবও
বাম্বল কেবল একটি অ্যাপ নয়; এটি নারীবান্ধব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে। অনলাইনে অশালীন ছবি পাঠানোকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে টেক্সাসে আইন পাস করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন হুইটনি।
পরিচালক র্যাচেল লি গোল্ডেনবার্গ বলেন, “পুরুষতান্ত্রিক দুনিয়ায় মানিয়ে নেওয়া আর প্রতিবাদ করার ঝুঁকির মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। হুইটনি সেই পথ খুঁজেছেন—ভুল করেছেন, আবার সেই ভুল থেকেই শিখেছেন।”
পর্দায় হুইটনি
সিনেমায় হুইটনির চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি সহপ্রযোজকও লিলি জেমস। তাঁর মতে, “হুইটনির চিন্তা ও আবেগের গতি ধরাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।” লিলির আশা, ছবিটি দেখে আরও অনেক তরুণী উদ্যোক্তা হতে অনুপ্রাণিত হবেন। “যদি একজন নারীও নিজের স্বপ্ন আঁকড়ে ধরতে সাহস পান, তবে আমাদের কাজ সফল হবে,” বলেন তিনি।