দেশে গরম মানে শুধু থার্মোমিটারের তাপমাত্রা নয়, বরং শরীরে অনুভূত অস্বস্তিকর ভ্যাপসা অনুভূতি। এটিই আসলে হিট ইন্ডেক্স বা তাপসূচক। সাম্প্রতিক কয়েকদিনের ভ্যাপসা গরমের মূল কারণ হলো বাতাসের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার মিলিত প্রভাব, যা শরীরকে আরও বেশি গরম অনুভব করায়। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি)।
তাপমাত্রা বনাম হিট ইন্ডেক্স: কোনটি বেশি প্রাসঙ্গিক?
তাপমাত্রা: থার্মোমিটারে মাপা বাতাসের প্রকৃত তাপমাত্রা।
হিট ইন্ডেক্স: তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার সম্মিলিত প্রভাবে শরীরে যে তাপমাত্রা অনুভূত হয় তার পরিমাপ। যেমন, ঢাকায় যদি বাতাসের তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা থাকে ৭০ শতাংশ, তবে শরীরে তা ৩৯-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো অনুভূত হতে পারে। আর্দ্রতা যত বেশি, তত বেশি বাড়ে হিট ইন্ডেক্স। তাই আবহাওয়া অ্যাপে “Feels Like” বা RealFeel® তাপমাত্রা দেখানো হয়, যা বাস্তব অনুভূতিকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করে।
আর্দ্রতা বেশি হলে গরম কেন বেশি লাগে?
মানুষের শরীর ঘামের মাধ্যমে নিজেকে ঠান্ডা রাখে।
কম আর্দ্রতা: বাতাসে জলীয়বাষ্প কম থাকলে ঘাম দ্রুত শুকিয়ে শরীর ঠান্ডা হয়।
বেশি আর্দ্রতা: বাতাসে জলীয়বাষ্প বেশি থাকলে ঘাম সহজে শুকায় না। ফলে শরীরের তাপ বের হতে না পেরে জমে যায়, যা ভ্যাপসা ও অস্বস্তিকর অনুভূতি তৈরি করে। তাই আর্দ্র পরিবেশে গরমের কষ্ট বেড়ে যায়।
ঢাকায় ভ্যাপসা গরম বেশি হওয়ার কারণ
ঢাকার তুলনায় অন্যান্য অঞ্চলে গরম কিছুটা সহনীয় হলেও রাজধানীতে তা হয় দমবন্ধকর। কারণগুলো হলো—
ঘনবসতি ও যানবাহন: অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও যানবাহনের কারণে তৈরি হয় Urban Heat Island Effect, যা অনেকটা তাপ-গম্বুজের মতো কাজ করে।
কংক্রিটের শহর: ইট, কংক্রিট ও পিচের রাস্তা দিনের বেলা তাপ শোষণ করে রাতে ধীরে ধীরে ছাড়ে। এতে শহর দীর্ঘ সময় ধরে গরম থাকে।
সবুজের অভাব: গাছপালা ও খোলা জায়গা কম থাকায় প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা হওয়ার সুযোগ নেই।
আর্দ্র পরিবেশ: দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও জলাবদ্ধতার কারণে বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যায়, যা গরমকে আরও ভ্যাপসা করে তোলে।
বিডব্লিউওটি জানায়, এসব কারণে ঢাকার গরম শুধু তাপমাত্রার বিষয় নয়, বরং হয়ে ওঠে দমবন্ধকর ভ্যাপসা। তাপমাত্রা ও হিট ইন্ডেক্সের এই পার্থক্য বোঝা জরুরি, যাতে গরমের প্রকৃত প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকা যায়। বিশেষ করে ঢাকায় ভ্যাপসা গরম থেকে রক্ষা পেতে পর্যাপ্ত পানি পান, হালকা পোশাক পরা এবং আশপাশে বেশি করে গাছ লাগানো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।