কৈশোরে জানা জরুরি
শৈশবের আদুরে দিনগুলো পেরিয়ে ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠার এক নতুন অধ্যায় হলো কৈশোর। এ সময় শরীর যেমন লম্বা হতে থাকে, তেমনি দেহের গঠনও বদলাতে থাকে। মনেও আসে নানা পরিবর্তন। ছোটবেলায় মা–বাবা ও আপনজনেরা যত্ন নেন, কিন্তু কৈশোরে এসে ধীরে ধীরে নিজের যত্ন নেওয়ার মতো স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা শুরু হয়। আর এজন্য দরকার নিজেকে ভালোভাবে জানা।
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. অঞ্জনা সাহা বলেন, কৈশোরের পরিবর্তনগুলো জীবনের স্বাভাবিক ধাপ। এই পরিবর্তন না হলে বরং সেটিই অস্বাভাবিক। তাই বদলে যাওয়াকে সহজভাবে মেনে নিয়ে নিজের যত্ন নেওয়া জরুরি। কোনো সমস্যা হলে পরিবারের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলতে হবে, আর প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে।
কিশোরের দেহে পরিবর্তন
বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরদের বগল ও তলপেটে লোম গজায়, কণ্ঠস্বর ভাঙে, প্রজনন অঙ্গে আসে পরিবর্তন। ধাপে ধাপে এই সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে ঘটে, আর এর মাধ্যমেই একটি ছেলে ধীরে ধীরে পুরুষে পরিণত হয়।
কিশোরীর দেহে পরিবর্তন
কিশোরীর দেহেও ঘটে নানা পরিবর্তন। স্তনের গঠন শুরু হয়, বগল ও তলপেটে লোম গজায় এবং শুরু হয় মাসিক। এসবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা একটি মেয়েকে ধীরে ধীরে নারীতে রূপ দেয়।
মনের পরিবর্তন
হরমোনের প্রভাবে মনেও পরিবর্তন আসে। হুট করেই মেজাজ খিটখিটে হতে পারে, যাকে বলে মুড সুইং। কারও ক্ষেত্রে হতাশা তৈরি হয়, আবার কারও মধ্যে বাড়ে উদ্ধত আচরণ। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ জন্ম নেয়—এসব কিছুই স্বাভাবিক। এর জন্য নিজেকে দোষী ভাবার কিছু নেই।
করণীয়
পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে—দুধ, ডিম, শাকসবজি ও ফলমূল। ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলাই ভালো।
শরীরচর্চা জরুরি। খেলা, সাঁতার, দড়িলাফ, সাইকেল চালানো বা যোগব্যায়ামের অভ্যাস করা যেতে পারে।
পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা মানতে হবে নিয়মিত।
মন ও আচরণ
মন খারাপ থাকলেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। হঠাৎ বিরক্ত লাগলে কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ না করে নিজেকে সময় দাও। কারও প্রতি আকর্ষণ জন্মালে সেটাকেও পরিণতবোধ দিয়ে সামলাতে হবে। নিজের, পরিবারের এবং অপরজনের সম্মানের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
নিরাপত্তা
নিজেকে সবসময় নিরাপদ পরিবেশে রাখবে। কোনো সময় যদি খারাপ স্পর্শ বা অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা হয়, সঙ্গে সঙ্গে বড়দের জানাবে। মনে রেখো, অপরাধীর দোষ তার, তোমার নয়।
কৈশোর জীবনের সুন্দর কিন্তু সংবেদনশীল সময়। পরিবর্তনগুলোকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে আত্মবিশ্বাসীভাবে এগিয়ে যাওয়াই সবচেয়ে জরুরি।