মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবা বা নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি হলো একটি বিরল কিন্তু প্রাণঘাতী পরজীবী, যা মানুষের মস্তিষ্কে সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম। সাধারণত এটি উষ্ণ মিঠাপানিতে বাস করে, যেমন পুকুর, হ্রদ, নদী বা অপরিষ্কার সুইমিংপুল। সম্প্রতি ভারতের কেরালায় এই সংক্রমণে কয়েকজনের মৃত্যু সংবাদে এসেছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
বাংলাদেশেও ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর এই রোগে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছিল।
সংক্রমণের উপায়
-
অ্যামিবা মূলত উষ্ণ পানির মাধ্যমে নাক দিয়ে প্রবেশ করে মস্তিষ্কে পৌঁছায়।
-
পানি পান করা বা একজন থেকে আরেকজনের সঙ্গে হাঁচি–কাশি দ্বারা সংক্রমণ ছড়ায় না।
লক্ষণ
প্রাথমিকভাবে দেখা যায়:
-
তীব্র মাথাব্যথা
-
জ্বর ও বমি
-
ঘাড় শক্ত হওয়া
চিকিৎসা শুরু না হলে বা ধীরগতিতে চিকিৎসা পেলে সংক্রমণ দ্রুত অগ্রসর হয়, যা হতে পারে:
-
খিঁচুনি, ভারসাম্যহীনতা, হ্যালুসিনেশন
-
ঘ্রাণ ও দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া
-
অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, কোমা এবং কয়েক দিনের মধ্যে মৃত্যু
চিকিৎসা না পেলে মৃত্যুহার ৯৬–৯৮ শতাংশ।
চিকিৎসা
যদিও সংক্রমণ মারাত্মক, কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিবায়োটিকের যৌথ ব্যবহার রোগীকে সুস্থ করতে পারে। সাধারণত ব্যবহৃত ওষুধ:
-
অ্যামফোটেরিসিন বি
-
মিল্টেফোসাইন
-
ফ্লুকোনাজোল
-
রিফাম্পিন
প্রতিরোধ
-
অজানা বা অপরিষ্কার উষ্ণ পানিতে সাঁতার না কাটা
-
নাক দিয়ে পানি প্রবেশ এড়াতে নাক ক্লিপ ব্যবহার বা হাত দিয়ে নাক বন্ধ রাখা
-
নাক পরিষ্কারে ফুটানো বা ফিল্টার করা পানি ব্যবহার
-
সুইমিংপুলে নিয়মিত ক্লোরিন ব্যবহার নিশ্চিত করা
বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি
বাংলাদেশের উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া এবং অপরিষ্কার জলাশয়ের কারণে ঝুঁকি পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যদিও সংক্রমণ এখনো বিরল, জলবায়ু পরিবর্তন ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ভবিষ্যতে ঝুঁকি বাড়তে পারে। সতর্কতা অবলম্বন করলেই মারাত্মক সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব।